সুনামগঞ্জ , বুধবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৫ , ৩ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
হাসপাতাল চালুর দাবিতে মেডিকেল কলেজ শিক্ষার্থীদের অনির্দিষ্টকালের ক্লাস বর্জন বর্ণিল আয়োজনে বর্ষবরণ হাওরে চড়ক উৎসবে মানুষের ঢল ভারী বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা, দ্রুত পাকা ধান কাটার আহ্বান বন্যার ঝুঁকিতে হাওরাঞ্চল তিন দপ্তরের ছুটি বাতিল গাজায় ইসরায়েলি বর্বরতায় নিহত বেড়ে ৫১ হাজার, নিখোঁজ ১১০০০ ধর্মপাশায় দুই আসামি গ্রেফতার বিএনপি’র ঈদ পুনর্মিলনী সরকারি জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয়ে নববর্ষ উৎসব ডাকসু নির্বাচনের কমিশন গঠন মে মাসে এই সরকারকে ৫ বছর চাওয়ার কথা আমার নয়, জনগণের : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা সাগর-রুনি হত্যা তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের সময় পেছালো ১১৮ বার সুনামগঞ্জ শহরের শৃঙ্খলার জন্য অগ্নি স্নানে শুচি হোক ধরা নববর্ষের প্রত্যাশা, বিজন সেন রায় বোরো ধান কাটার ধুম, হাওরে বৈশাখী হাসি আমাদের পহেলা বৈশাখ ছাতকসহ দেশের ১০ অর্থনৈতিক অঞ্চলের পরিকল্পনা বাতিল ফিলিস্তিনে ইসরাইলি হামলার প্রতিবাদে জাতীয় পার্টির বিক্ষোভ

পথে যেতে যেতে পথচারী

  • আপলোড সময় : ২৬-০২-২০২৫ ১২:৪৪:২৪ পূর্বাহ্ন
  • আপডেট সময় : ২৬-০২-২০২৫ ১২:৪৪:২৪ পূর্বাহ্ন
পথে যেতে যেতে পথচারী
ফেব্রুয়ারি আমাদের ভাষার মাস। এ মাসের ঘটনাবলি ইতিহাসের সাক্ষী। মুখের ভাষা আমাদের মায়ের ভাষা। কিন্তু, এ ভাষা পরিবর্তনের উপর প্রচ- চাপ এসেছে বিগত সময়ে বারবার। যদিও ১৯৫২ সালে এর বিস্ফোরণ ঘটেছিল। কিন্তু, এর বহু আগে থেকেই এই ষড়যন্ত্রের সূচনা হয়েছিল। এই ষড়যন্ত্রের ইতিহাস বড়ই দীর্ঘ। বাংলাভাষার উপর বার বার যে আঘাত অনেকের ধারণা মতে তার শুরু একাদশ শতাব্দীতে। এ সময় রাজত্ব ছিল ‘সেন রাজবংশের’। তার আগেই ছিল ‘বৌদ্ধ শাসন’। বৌদ্ধ শাসন মোটামুটি শান্তিপূর্ণ ছিল। সেন রাজবংশ শাসন আমল প্রতিষ্ঠিত হয় ১২০১ খ্রিস্টাব্দে। সেন রাজারা ক্ষমতাসীন হয়েই বাংলা ভাষা চর্চা নিষিদ্ধ করে। পরিবর্তে সংস্কৃতকে রাষ্ট্রভাষা করার পক্ষে মত দেন। বিষয়টি নিয়ে তখন তেমন আলোচনা হতে দেখা যায়নি। একজন অবাঙালি অর্থাৎ ব্রিটিশ লেখক ‘ন্যাথানিয়েল ব্র্যাসি হ্যালহেড’ প্রথম বাংলা ভাষার পক্ষে স্বাধীন মতামত দিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেন। ১৭৭৮ সালে তিনি রচনা করেন বাংলা ব্যাকরণ : অ এৎধসসধৎ ড়ভ ইবহমধষ খধহমঁধমব। যা ছিল বাংলা ভাষার। বিভিন্ন গবেষকদের মতে এটিই প্রথম বাংলা হরফে মুদ্রিত বই। মি. হ্যালহেড বাংলা ভাষায় এই ব্যাকরণ প্রকাশ করে জানিয়ে দেন যে, বাংলা ভাষাই হবে এ অঞ্চলের একমাত্র রাষ্ট্রীয় ভাষা। সাধারণ মানুষ এ বিষয়ে কেবল ভাবতে শুরু করেছে। এরই মধ্যে ভারতের আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. জিয়াউদ্দিন বাংলার পরিবর্তে উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার প্রস্তাব করলে তা আলোড়ন সৃষ্টি করে। সেই সময়ের পূর্ব বাংলার প্রধানমন্ত্রী ছিলেন খাজা নাজিমুদ্দিন। তখনকার কিছু কিছু বুদ্ধিজীবী ড. জিয়াউদ্দিনের প্রস্তাবের পক্ষে মতামত দিলেও তা মেনে নিতে পারেননি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, অধ্যক্ষ মো. ইব্রাহিম খা ও কাজী মোতাহার হোসেন চৌধুরীসহ কিছু বুদ্ধিজীবী। তারা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার পক্ষে জোরালো মতামত দেন। তখন দেখা যায় একগুচ্ছ সংবাদপত্র এর পক্ষে মতামত দেন। বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার সম্ভাবনা নিয়ে লেখালেখি হতে দেখা যায়। ‘দৈনিক ইত্তেহাদ’ পত্রিকার ২২ জুন ১৯৪৮ সংখ্যায় সাংবাদিক আব্দুল হক-এর কলামটি ছিল সর্বপ্রথম প্রবন্ধ। তার কিছুদিন পর ২৯ জুলাই ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ একটি কলাম লিখেন যা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। এর ধারাবাহিকতায় আরও বিভিন্ন সংবাদপত্র জার্নাল বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার বিষয়ে মতামত ব্যক্ত করে প্রবন্ধ-নিবন্ধ প্রকাশ করে। ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ৬-৭ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত ‘পূর্ব পাকিস্তান গণতান্ত্রিক যুবলীগ’-এর একটি সভায়ও বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার পক্ষে মতামত ব্যক্ত করা হয়। এভাবে আলোচনা চলতে থাকায় প্রতিষ্ঠিত হয় সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘তমদ্দুন মজলিস’। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ১৪ আগস্ট। ঠিক তার ১৭ দিন পর গঠিত হয় ‘তমদ্দুন মজলিস’ অর্থাৎ ১৯৪৭ সালের ১ সেপ্টেম্বর। ‘তমদ্দুন মজলিস’ গঠিত হওয়ার পরই প্রকৃতপক্ষে ভাষা আন্দোলন বেগবান হয়। সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক আবুল কাসেম। ১৯৪৭ সালের ১ অক্টোবর ‘তমদ্দুন মজলিস’-এর উদ্যোগে গঠিত হয় ‘রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ’। এর প্রথম আহ্বায়ক মনোনীত হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন রসায়ন বিভাগের প্রভাষক নূরুল হক ভূইয়া। এভাবেই এগিয়ে যায় রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন। ১৯৫২ সাল ছিল অগ্নিঝরা সময়। ভাষার দাবিতে উত্তাল ফেব্রুয়ারি মাস। ২০ ফেব্রুয়ারি ঢাকা শহরে ১৪৪ ধারা জারি হলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। ২১ তারিখ গাজীউল হকের নেতৃত্বে সভা আরম্ভ হলে ১৪৪ ধারা ভঙ্গের সিদ্ধান্ত হয়। ঐদিন বিকেল ৩টার দিকে মেডিকেল কলেজ এলাকায় পরিস্থিতির অবনতি ঘটে। পুলিশ তখন আন্দোলনরত ছাত্রদের উপর আচমকা গুলি চালালে ছাত্ররাও বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। এ সময় পুলিশের গুলিবর্ষণে মেডিকেল কলেজ হোস্টেলের গেটের সামনে রফিকুর রহমানের মাথায় গুলি লাগে। তৎক্ষণাৎ তাঁর মৃত্যু ঘটে। ধরা হয় তিনি ভাষা আন্দোলনের প্রথম শহীদ। এরপর গুলিতে আহত হয়ে শহীদ হন আবুল বরকত। ২১ তারিখ পুলিশের গুলিতে আহত হয় মোট ৬০ জন। কিন্তু শহীদ হন ৩ জন। নিহতদের লাশ পুলিশ গোপনে সরিয়ে নিয়ে আজিমপুর গোরস্থানে দাফন করে। ফলে ২২ তারিখ গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এভাবে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে সারাদেশ। তখনই দাবি ওঠে ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’। আরও অনেক চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে অবশেষে আমরা পেলাম ভাষার অধিকার। এলো স্বাধীনতা। বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়ালো বাঙালি জাতি। সকল শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা।

নিউজটি আপডেট করেছেন : SunamKantha

কমেন্ট বক্স